স্মৃতিময় ফেলানী হত্যা দিবস আজ — ৭ জানুয়ারি ২০১১
স্মৃতিময় ফেলানী হত্যা দিবস আজ — ৭ জানুয়ারি ২০১১
বাংলাদেশের সীমান্ত ইতিহাসের এক বেদনাময় অধ্যায়ের নাম ফেলানী খাতুন। আজ ৭ জানুয়ারি, স্মরণ করা হচ্ছে সেই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড, যা গোটা দেশকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল ২০১১ সালে।
সেদিন সকালে ঠান্ডা হাওয়া বইছিল কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে। ভারতের দিকে বিয়ে করতে যাওয়ার পথে মাত্র ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। ঘটনাটি ঘটে বাংলাদেশ-ভারত ৯৪৭ নম্বর সীমান্ত খুঁটির কাছে। সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর নিথর দেহের সেই দৃশ্যটি পরিণত হয়েছিল মানবতার বিবেক নাড়া দেওয়া এক প্রতীকে।
ফেলানীর লাশ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে কাঁটাতারে ঝুলে ছিল। স্থানীয়দের আহাজারি, সীমান্তে জড়ো হওয়া জনতার কান্না—সবই মিলিয়ে সেদিন সীমান্তপারের মানুষ যেন অবিশ্বাসের এক দৃশ্য দেখেছিল। পরে বিএসএফ সদস্যরা লাশ নামিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে নিয়ে যায়।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো, গণমাধ্যম, সাধারণ মানুষ—সবাই একবাক্যে দাবি তোলে, “ফেলানীর জন্য বিচার চাই।” ২০১১ সালের এই হত্যাকাণ্ড সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকারের বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলে।
বছর ঘুরে আজও ৭ জানুয়ারি এলে মানুষ মনে করে সেই নিরীহ কিশোরীকে, যার একমাত্র “অপরাধ” ছিল নিজ দেশে ফিরে আসার চেষ্টায় থাকা। প্রতি বছর এই দিনটিতে কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পালন করা হয় “ফেলানী হত্যা দিবস”, নীরব সমাবেশ ও মোমবাতি প্রজ্বলনের মাধ্যমে জানানো হয় শ্রদ্ধা।
আজ ফেলানী নেই, কিন্তু তার মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—মানবতার কোনো সীমানা নেই। সীমান্তের কাঁটাতার ছিন্ন করেও তার স্মৃতি অমলিন, তার প্রশ্ন আজও বেজে ওঠে—
“মানবতার বিচার কবে হবে?”